ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

কৃত্রিম সংকট তৈরী করে অসাধু মিল মালিকদের লবণ আমদানীর ষড়যন্ত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার ::

পর্যাপ্ত লবণ মজুদ থাকার পরও এক শ্রেণির অসাধু মিল মালিক সংকট তৈরি করে লবণ আমদানির পাঁয়তারা চালাচ্ছে। এমন অভিযোগ লবণ চাষি ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের। তবে মিল মালিকরা বিষয়টি সম্পুর্ণভাবে অস্বীকার করেন। এ অবস্থায় লবণ চাষি কল্যাণ পরিষদ, উপকূলের চাষিদের বাঁচাতে লবণ আমদানির অপচেষ্টা বন্ধের দাবি জানিয়েছে। অবশ্য শিল্পমন্ত্রী আশ্বাস দেন লবণ চাষি, মিল মালিক ও বিসিকের সমন্বয়ে মাঠ পর্যায়ে যাচাই-বাছাইয়ের পর সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।

কক্সবাজারের উপকূলবর্তী লবণ মাঠ। হাজার হাজার একর জমিতে চাষিরা সমুদ্রের লবণাক্ত পানি জমিয়ে সূর্যের তাপে ৩ থেকে ৪ দিন কড়া রোদে পানি শুকিয়ে তৈরি করেন লবণ। কক্সবাজার ও বাঁশখালীর ৬০ হাজার একর জমিতে ৫৫ হাজারের বেশি চাষি মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দেশের চাহিদা মেটাতে উৎপাদন করে থাকে এই লবণ।

কিন্তু এসব চাষিরা পান না তাদের ন্যায্য মূল্য। মাঠ পর্যায়ে চাষিদের কাছে স্বল্পমূল্যে লবণ ক্রয় করে অধিক মুনাফা করছে মিল মালিকরা। তাদের অভিযোগ, দেশে পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও সংকট তৈরি করে আমদানির পাঁয়তারা চালাচ্ছে এক শ্রেণির অসাধু মিল মালিক।

এক লবণচাষী জানান, ‘কেজিপ্রতি আমাদের খরচ ১২ থেকে ১৩ টাকা। কিন্তু আমরা মূল্য পাচ্ছি ৭ টাকা।’

আরেকজন জানান, ‘যারা বড় বড় মিলার আছেন, তারা কেজি প্রতি ৪০-৪৫ টাকা দরে লবণ বিক্রি করে। দেশে চাহিদা অনুযায়ী প্রচুর পরিমাণ লবণ উৎপাদন হওয়ার পরও তারা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে লবণ আমদানি করতে চাচ্ছে।’

তবে মিল মালিকরা বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করে দায় চাপালেন মধ্যস্বত্বভোগীদের ওপর। এ অবস্থায় উপকূলের চাষিদের বাঁচাতে লবণ আমদানি বন্ধ করার দাবি জানালেন লবণ চাষি কল্যাণ পরিষদের নেতা।

বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি নুরুল কবির বলেন, ‘মিল মালিকেরা তো কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে না। প্রকৃত চাষীরাও লবণ সংকট সৃষ্টি করে না। যারা মধ্যসত্ত্বভোগী, লবণের স্টক করে রাখে যারা, তারা করে।’

বাংলাদেশ লবণ চাষি কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মোস্তফা কামাল চৌধুরী বলেন, ‘লবণচাষীদের বাঁচানোর জন্য, আমার দেশের অর্থনীতিকে বাঁচানোর জন্য পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে লবণ এনে ঘাটতি পূরণ না করার জন্য একটা লবণ ভোট আবশ্যকীয়।’

তবে শিল্পমন্ত্রী জানালেন, লবণ চাষি, মিল মালিক ও বিসিকের সমন্বয়ে মাঠ পর্যায়ে যাচাই-বাছাইয়ের পর সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।

শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, ‘লবণ চাষী, লবণ মালিক, বিসিকের প্রতিনিধি, মিল মালিক, বিসিকের প্রতিনিধি- এদেরকে নিয়ে মনিটরিং করা হবে। মনিটরিং করে যেটা সঠিক মনে হবে- সেভাবেই আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।’

বিসিকের দেয়া তথ্য মতে, ২০১৮ সালে দেশে লবণের চাহিদা ধরা হয় ১৬ লাখ ১১ হাজার মেট্রিক টন। আর উৎপাদন হয়েছে সাড়ে ১৪ লাখ মেট্রিক টন। তবে ২০১৭ সালের চাহিদা পূরণের পর উদ্বৃত্ত ছিল প্রায় আড়াই লাখ মেট্রিক টন।

পাঠকের মতামত: